HISTORY

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল (সা.)-এর কবর জিয়ারত সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

আমরা সাহাবী, তাবেয়ী ও ইসলামের প্রথম সারির অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের কর্মধারায় মহানবীর কবর জিয়ারতের রীতি লক্ষ্য করি।

এরূপ কয়েকটি নমুনা এখানে উপস্থা পন করছি।

১।হযরত ফা তি মাতুজ যাহরা ( আ.) : হযরত আলী (আ.) বলেছেন :

মহানবীর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা জাহরা (আ.) তাঁর পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে

এক মুঠো কবরের মাটি নিয়ে নিজ চোখে স্পর্শ করলেন এবং ক্র ন্দনরত অবস্থায় নি ম্নোক্ত কবিতাটি আবৃত্তি কর লেন১৩৯ :

ماذا علی من شمّ تربة احمد

ان لا يشمّ علی الزمان غوالیا

صبت علیَّ مصائب لو أنها

صبَّت علی الایام عدن لیالیا

২।হযরত বেলাল ( রা.) : হযরত বেলাল রাসূল (সা.)-এর ই ন্তেকা লের পর সিরিয়ায় হিজরত করেন।

এ করা ত্রে তিনি মহানবী (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলেন যে,তিনি তাঁকে বলছেন,‘ হে বেলাল!

আমার প্রতি দায়ি ত্বের ক্ষে ত্রে এটি তোমার কিরূপ অবহেলা? তোমার কি আমাকে জিয়া রতে র সময় আসে নি?

হযরত বেলাল অস্থির হয়ে ঘুম থেকে জাগলেন ও দ্রুত প্র স্তুত হয়ে বাহনে আরোহণ করে

মদীনার দিকে যাত্রা করলেন। মদীনায় পৌঁছেই তিনি রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে ক্রন্দন করতে

লাগলেন ও নিজের গণ্ডদেশ কবরের উপর রাখলেন ।১৪০

৩। আব দু ল্লাহ্ ইবনে উমর : সামহুদী বর্ণনা করেছেন,‘ আবদু ল্লাহ্ ইবনে উমর যখনই কোন সফর হতে

ফিরতেন রাসূলের কবরের নিকট গিয়ে সালাম দি তেন ।১৪১

৪।হযরত আবু আইয়ুব আনসারী :

হাকিম নি শাবুরী বর্ণনা করেছেন,‘

একদিন মারওয়ান ইবনে হাকাম মহানবীর কবরের নিকট গিয়ে দেখল এক ব্যক্তি রাসূলের কবরের

উপর উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে (ও ক্রন্দন করছে)। মারওয়ান ঐ ব্য ক্তির ঘাড় ধরে উঠিয়ে বলল,‘

জান তুমি কি করছ?’ কিন্তু পরক্ষ ণেই তাকিয়ে দেখল তিনি রাসূলের প্র সিদ্ধ সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী।

আইয়ুব আনসারী তার দিকে তাকিয়ে বললেন,‘ আমি কোন পাথরের নিকট আসি নি,আমি আল্লাহর রাসূলের নিকট এসে ছি ।১৪২

রাসূলের পবিত্র আহলে বাইতের ইমামগণ তাঁদের অনু সারী দের তাঁদের কবরসমূহ জিয়ারত করতে বলেছেন।

এরূপ কয়েকটি হাদীস এখানে উল্লেখ করছি।

১। শেখ তূসী ইমাম আলী ইবনে মূসা (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন,‘

প্রত্যে ক ইমামেরই তাঁর অনুসা রীদের উপর অধিকার ও প্র তি শ্রুতি রয়েছে।

এই প্রতি শ্রু তি তাঁদের কবর জিয়ার তের মাধ্যমে পূ র্ণরূপে পালিত হয়।১৪৩

২। মুহা ম্মাদ ইবনে মুসলিম ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন,‘

আমাদের অনু সারী দের ইমাম হুসাইন ইবনে আলীর কবর জি য়ার তের উপদেশ দিচ্ছি।

কারণ প্রতিটি মুমিনের জন্য ইমাম হুসা ইনের ইমামতের সাক্ষ্য প্রদান ও তাঁর স্বী কা রোক্তি

মহান আল্লাহর পক্ষ হতে ওয়াজিব করা হয়েছে।’ ১৪৪

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা. এর কবর জিয়ারত

৩। আলী ইবনে মাইমুন বলেছেন,‘ ইমাম সাদিক (আ.) হতে শুনেছি,‘

যদি তোমাদের মধ্য হতে কোন ব্যক্তি এক হাজার বার হজ্জ্ব পালন করে,

কিন্তু ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারত না করে,আল্লাহর অধিকারসমূহের

একটি অধি কার কে পালন করে নি (অর্থাৎ ত্যাগ করেছ)।’

এরূপ কেন হবে সে সম্প র্কে তাঁকে জি জ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,‘

প্রতিটি মুসল মা নের উপর ইমাম হুসাই নের অধিকার রয়ে ছে।’১৪৫

কবর জিয়ারতের নিয়তে সফরের শরীয়তগত বৈধতা

পূর্বে আমরা ওয়াহাবী আলেমদের ফতোয়ার আলোচনায় উল্লেখ করেছি তাদের সা ম্প্র তিক

আলেমগণ কবর জিয়া রতকে বৈধ মনে করলেও কবর জি য়া রতের নিয়তে যা ত্রাকে

বৈধ ও জায়েয মনে করেন না,বরং একে‘ বিদআত’ বলে অভিহিত করেছেন,

এমনকি যদি তা রাসূল (সা.)-এর কবর জি য়ার তের নিয়তেও হয়।

তবে ইবনে তাইমিয়া কবর জি য়ার তকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফতোয়া দিয়ে ছেন।

এখন আমরা কবর জি য়ারতের নিয়তে (বিশেষত রাসূলের কবর জিয়ারত) সফরের শরীয়তগত (শারয়ী)

বৈধতাকে প্রমাণ করব :

১। মহান আল্লাহ বলেছেন :

( وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ  جَاءُوكَ  فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا)

আয়া তটি তে১৪৬  ‘ جاءوک ’

বলা হয়েছে যাতে নিকট বর্তী ও দূর বর্তী সকল স্থান হতে রাসূলের নিকট গমনের বিষয়টি প্রমা ণিত হয়।

২। যে হা দীস টিতে মহানবী (সা.) বলে ছেনمن زار قبری তাতে জিয়া রতের শব্দটিও নিকট ও

দূর বর্তী উভয় স্থানকে শামিল করবে।

বিশেষত যে হা দীসটিতে ইবনুস সাকান সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন তাতে উল্লেখও হয়েছেمن جائنی زائراً

অর্থাৎ যে আমার নিকটে আসবে জিয়া রতকা রী হিসেবে যা জি য়ারতে র সফরের প্রতিই ইঙ্গিত করছে।

বাহ্যিক ভাবে তা হতে জিয়া র তের উ দ্দে শ্যে সফর বোঝা যায়।

৩। কোন কোন হাদীস হতে স্প ষ্ট ভাবে অথবা বাক্যের ধরন হতে জিয়ারত মু স্তাহা ব ও জায়েয হওয়ার

বিষয়টি প্রমা ণি ত  হয়, এ মনকি  জি য়া রতের নিয়ত করা ও জিয়া  র তের নিয়তে

সফরের প্রস্তু তি গ্রহণ এবং সে উ দ্দে শ্যে যাত্রার বিষয়টিও প্র মাণিত হয়।

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা. এর কবর জিয়ারত

মুসলিম ও অ ন্যান্য রা সহীহ সনদে বুরাইদা আসলামী হতে বর্ণনা করেছেন মহানবী (সা.) বলেছেন :‘

আমি তো মাদে র কে আমার কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করে ছি লাম, কি ন্তু আমাকে আমার মাতার কবর

জিয়া র তের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এখন হতে তোমরাও কবর জিয়ারত কর,

তা তোমাদের আ খে রা তের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।’ ১৪৭

মহানবী (সা.) বলেছেন,‘ আমাকে আমার মাতার কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে’ –

বাক্যটি হতে বোঝা যায় কোন স্থান হতে জি য়ার তের নিয়তে বের হতে কোন অসুবিধা নেই।

সামআনী ইমাম আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,এক আরব বেদুইন রাসূ লু ল্লা হ্ (সা.)-এর দাফনের

তিনদিন পর মদীনায় প্রবেশ করে সরাসরি তাঁর কবরের নিকট গিয়ে তাঁর কবরের উপর উপুড় হয়ে

মাটি উঠিয়ে নিজের মাথার উপর ফেলতে লাগল এবং তাঁর উদ্দেশে বলল,‘ হে আল্লাহর রাসূল!

আপনি আমাদের উদ্দেশে বলেছেন এবং আমরাও আপনার কথা শুনেছি। আপনি আল্লাহর নিকট হতে

কোরআনের আয়াত গ্রহণ করেছেন এবং আমরা আপনার নিকট থেকে তা গ্রহণ করেছি।

আপনার উপর অবতীর্ণ আয়াতের একটি হলো ولو أنّهم إذ ظلموا أنفسهم جاءوک … আমি আমার উপর জুলুম

(অনিষ্ট সাধন) করেছি। এখন আপনার নিকট এ সেছি, আমা র জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থ না করুন । ১৪৮

হযরত বেলালের স্বপ্ন দেখা এবং সিরিয়া থেকে মদীনার উদ্দেশে রাসূলের জিয়া র তের লক্ষ্যে যাত্রার

বিষয়টি যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি,

কবর জি    য়ার তের উ দ্দে শ্যে যাত্রার বৈধতাকে ভা লো ভা বেই প্রমাণ করে।১৪৯

সাবকী বর্ণনা করেছেন,‘

খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রায়শই সিরিয়া হতে কাউকে না কাউকে

মদীনায় তাঁর পক্ষ হতে জিয়ারত করতে ও রাসূলের প্রতি সালাম দেয়ার উ দ্দে শ্যে প্রেরণ কর তেন ১৫০

খাতিব বাগদাদী হাম্বা লী ফিকাহর শীর্ষ স্থা নীয় আলেম আবি আল খাল্লাল হতে বর্ণনা করেছেন যে,

তিনি তাঁর সময়ে যে কোন গু রুত্ব পূর্ণ সমস্যায় হযরত মূসা ইবনে জাফর (আ.)-এর কবর জি য়ারতের

নিয়ত করতেন ও সে উদ্দে শ্যে যাত্রা করতেন। তিনি তাঁর প্রতি তাও য়া সসুল করতেন

(অর্থাৎ তাঁর মধ্য স্থতা য় ও ম র্যা দার শানে আল্লাহর নিকট চাই তেন)। ফলে তাঁর সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।১৫১

পূর্বে উ ল্লি খিত আবু বকর মুহা ম্মদ ইবনে মু য়াম্মা লের বর্ণনা হতেও আল্লাহর ওলীদের কবর জি য়া  রতের উদ্দে শ্যে যাত্রার বৈধতা প্র মা ণিত হয়।১৫২

তালহা ইবনে উবা ইদু ল্লাহ্ও বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) সাহা বীদের নিয়ে ওহুদের শহীদদের কবর জি য়ার তের উদ্দে শ্যে গি য়েছেন ।১৫৩

হযরত আয়েশা বলেছেন,‘ যে রা তগুলোতে আমার পালা থাকত এবং রাসূল (সা.) আমার ঘরে থাকতেন

শেষ রা ত্রি তে তাঁকে জা ন্না তুল বাকীতে কবর জিয়ারতে যেতে দেখ তাম ।১৫৪

উপ রিউ ক্ত হা দীসগুলো থেকে কবর জি য়া রতের নিয়তে যাত্রা শুধু জায়েযই নয়, এমন কি মু স্তাহাব হওয়ার বিষয়টিও প্রমা ণিত হয়।

৪। মুস লমান দে র ইতি হাসের ধারায় এ বিষয়টি সু স্পষ্ট যে,তারা আল্লাহর ওলীদের কবর জি য়ার তের উ দ্দে শ্যে যাত্রা করতেন।

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

৫। আহলে সুন্না তের সহীহ হাদীস গ্রন্থ স মূহে রাসূল (সা.) হতে অসংখ্য বর্ণনায় বলা হয়েছে,

যদি কেউ মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ ফেলে তার প্রতি পদে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ও

তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়।১৫৫

এই সওয়াব লাভের বিষয়টি মসজিদে অবস্থানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও

পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই ঘটে থাকে,তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তাঁর

ওলীদের কবর জিয়ারতের প্রস্তুতি গ্রহণ ও এজন্য যাত্রাও আল্লাহর নিকট পছন্দনীয়।

  আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণের কবর জিয়ারত মুস্তাহাব হওয়ার দলিল

কবর জিয়ারত হারাম হওয়ার বিষয় গু লোতে ও য়াহা বীদের দলীল

কবর জিয়ারত হারাম হওয়ার বিষয়ে [এমনকি রাসূল (সা.)-এর কবরও] ওয়া হা বীদের প্রধান দলিল

হলো আবু হুরাইরা বর্ণিত এ হাদীসটি : রাসূল (সা.) বলেছেন :‘

তিনটি মস জি দ,য থা মসজিদুল হারা ম, মস জিদুন নবী ও মসজিদুল আকসা ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দে শ্যে যাত্রা কর না।’ ১৫৬

তাদের উপস্থা পিত এই দলিলের জবাবে বলব,এই হাদীসে তিনটি স্থানকে ব্যতি ক্রম ধরা হয়েছে

অর্থাৎ আরবী ব্যক রণের ভাষায়‘ মুস তা সনা মিনহু’ র অনু বর্তী।‘ মুস তাসনা মিনহু’

অর্থাৎ যার হতে ব্যতি ক্রম করা হয়েছে তা দু’ ধরনের হতে পারে।

প্রথমত মুস তা সনা মিনহু‘ مسجد من المساجد ’ অর্থাৎ মস জিদ সমূহের মধ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতি ক্রম।

সেক্ষেত্রে হাদীসটির অর্থ হবে : মসজিদ গুলোর মধ্যে তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য গুলোর উ দ্দেশ্যে

যাত্রা করা বৈধ ও জায়েয নয়।

দ্বিতী য়ত যদি‘ মুস তাসনা মিনহু’ স্থানসমূহ হয়,সেক্ষেত্রে স্থানসমূহের মধ্যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশ্যে ছাড়া যাত্রা করা জায়েয নয়।

প্রথম অর্থে মহানবী (সা.)-এর কবর জিয়া র তের উ দ্দে শ্যে যাত্রার ক্ষে ত্রে কোন নি ষে ধাজ্ঞা নেই। কারণ মহানবীর কবর মসজিদের অ ন্ত র্ভুক্ত নয়।

দ্বিতীয় অর্থে নিষে ধা জ্ঞা সার্বিক হয়ে পড়ে,সেক্ষেত্রে যে কোন ধরনের সফরই নিষিদ্ধ হয়ে যায়,

এমনকি যদি তা  জিয়ার তের উদ্দে শ্যে নাও হয়। কোন ব্যক্তিই এরূপ নিষে ধা জ্ঞায় বি শ্বাসী নয়।

তাই আমরা বলতে পারি,যদি হাদীসটি সহীহ ও সঠিক হয়ে থাকে তবে রাসূলের ঐ নিষেধ নিষিদ্ধ ঘোষক নয়,

বরং উপদেশমূলক এ অর্থে যে,যেহেতু প্রত্যেক শহরেই মসজিদ রয়েছে তাই অন্য শহরের মসজিদের

উদ্দেশ্যে যাত্রা বাঞ্ছনীয় নয় ও অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু আল্লাহর ওলীগণের কবর জিয়ারত এরূপ নয়।

উপরন্তু তাঁদের কবর জিয়ারতের বরকত ও আধ্যাত্মিক ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আমরা পরবর্তীতে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করব।

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

গাজ্জালী এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন :‘ সফর করা একটি মুস্তাহাব ইবাদত।

যেমন আল্লাহর নবী,সাহাবী,তাবেয়ী,ওলীগণ ও আলেমদের কবর জিয়ারত। সার্বিকভাবে যে সকল ব্যক্তির

জীবদ্দশায় তাঁদের হতে বরকত ও আধ্যাত্মিক ফায়দা লাভ করা যায় তাঁদের মৃত্যুর পরও কবর

জিয়ারতের মাধ্যমে তাঁদের হতে বরকত ও ফায়দা লাভ করা যায়। তাই এ উদ্দেশ্যে যাত্রা বৈধ ও জায়েয।

এ বিষয়টির সাথে মহানবী (সা.) হতে উদ্ধৃত হাদীসটির-তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন স্থানের উদ্দেশ্যে

যাত্রা করো না-কোন বৈপরীত্য নেই। কারণ হাদীসটি মসজিদ সম্পর্কিত এবং সকল মসজিদ মর্যাদার

দিক থেকে পরস্পর সমান। তাই একটির উপর অপরটির কোন প্রাধান্য নেই যে,তার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে তিনটি মসজিদের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশেষত্ব রযেছে,তাই সেগুলোর উদ্দেশ্যে যাত্রার ক্ষেত্রে কোন

অসুবিধা নেই। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা এ বিষয়টি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন।১৫৭

ডক্টর আবদুল মালিক সাদী বলেছেন :‘ অন্য সকল মসজিদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা নিষেধ এজন্য যে,

এরূপ কর্ম অর্থহীন যেহেতু সকল মসজিদের সওয়াব সমান,তিনটি মসজিদ ব্যতীত।’ ১৫৮

কবর জিয়ারত ও নারিগণ 

ওয়াহাবীরা যদিও জিয়ারতের নিয়তে যাত্রা ব্যতীত কবর জিয়ারতকে পুরুষদের জন্য জায়েয মনে করে,

কিন্তু নারীদের জন্য কোনভাবেই কবর জিয়ারত জায়েয মনে করে না।

দ্বীনি মাসয়ালার জবাব দানের জন্য গঠিত ওয়াহাবীদের স্থায়ী সদস্য কমিটি ঘোষণা করেছে‘

কবর জিয়ারত কেবল পুরুষদের জন্য জায়েয,তদুপরি তা সে উদ্দেশ্যে যাত্রার নিয়ত ব্যতীত হতে হবে।

কিন্তু নারীদের জন্য কোন কবর জিয়ারত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।১৫৯

শেখ আবদুল আজিজ বিন বায বলেছেন :‘ কবর জিয়ারত নারীদের জন্য জায়েয নয়।

কারণ রাসূল (সা.) যে সকল নারী কবর জিয়ারতে যায় তাদের উপর অভিশাপ কামনা করেছেন।’ ১৬০

অন্যত্র এই নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে বলেছে,‘ যেহেতু নারীদের ধৈর্যশক্তি কম,

সেহেতু তারা কবরের নিকট আবেগতাড়িত হয়ে মর্সিয়া পাঠ করে ও তাদের মুখ হতে

ধৈর্যের পরিপন্থী কথা বেরিয়ে আসে।’ ১৬১

এই আপত্তির জবাবে আমরা বলব :  প্রথমত এই ফতোয়া রাসূলের সাহাবীদের ফতোয়া ও আচরণনীতির পরিপন্থী।

কারণ হযরত ফাতিমা (আ.) রাসূলের জীবদ্দশায় প্রতি শুক্রবার (জুমআর দিনে) হযরত হামজা (রা.)-এর কবর জিয়ারতে যেতেন।

তিনি তাঁর পিতা রাসূলের ইন্তেকালের পর স্বীয় পিতার কবর জিয়ারতে নিয়মিত যেতেন।

প্রথম ক্ষেত্রে স্বয়ং রাসূল (সা.) তাঁর এ কর্মে বাধা দেন নি। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হযরত আলী (আ.) ও অন্যান্য সাহাবী

তাঁকে নিষেধ করেন নি। ইবনে আবি মালিকা বলেছেন,‘ আমি হযরত আয়েশাকে তাঁর ভ্রাতা

আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবর জিয়ারতে নিয়মিত যেতে দেখতাম।’ ১৬২

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

দ্বিতীয়ত‘ হে আল্লাহ কবর জিয়ারতকারী নারীর উপর অভিশাপ বর্ষণ কর’ – এ হাদীসটি সনদের দিক থেকে দুর্বল।

যে তিনটি সনদে,যথা: হাসসান ইবনে সাবেত,ইবনে আব্বাস ও আবু হুরাইরা হতে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে

তিনটি সূত্রেই দুর্বল রাবী (হাদীস বর্ণনাকারী) রয়েছেন।

তৃতীয়ত এ হাদীস হযরত আয়েশা হতে বর্ণিত হাদীসের (রাসূল কবর জিয়ারত নিষেধ করেছিলেন,

কিন্তু পরে অনুমতি দিয়েছেন) পরিপন্থী।

চতুর্থত যদি নারীদের কম ধৈর্যের কারণে কবর জিয়ারত হতে তাদের নিষেধ করা হয়ে থাকে তবে

যে সকল নারীর ধৈর্য অধিক ও আপত্তিজনক কথা তাদের মুখ হতে বের হয় না,তাদের ক্ষেত্রে জিয়ারত নিষিদ্ধ নয়।

কারণ হারাম হওয়ার প্রাথমিক শর্ত তাদের মধ্যে নেই। হারাম তখনই হবে যখন

কোন জায়েয কর্ম নিশ্চিতরূপে মানুষকে হারামে ফেলে। তাই আহলে সুন্নাতের

অনেক প্রসিদ্ধ ব্যক্তিই নারীদের কবর জিয়ারকে ধৈর্যধারণের শর্তে জায়েয বলেছেন।

কবর জিয়ারতের ইতিবাচক প্রভাবসমূহ

কবর জিয়ারত মানুষকে কোন অন্যায়ে তো ফেলেই না,বরং কোন কোন হাদীসে এর কল্যাণমূলক

প্রভাবের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এখানে আমরা এরূপ কয়েকটির প্রতি ইশারা করছি :

১। জিয়ারতকারীর মধ্যে বিনয় সৃষ্টি করে এবং মৃত্যু ও আখেরাতের স্মরণ করায়;

সন্দেহ নেই মৃত ব্যক্তিদের  কবর জিয়ারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো আখেরাতের স্মরণ।

মুসলিম,আহমাদ ইবনে হাম্বাল,ইবনে মাজা এবং অন্যান্য হাদীসগ্রন্থ প্রণেতা নিজ নিজ সূত্রে

রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘ তোমরা কবর জিয়ারতে যাও,কেননা তা

তোমাদের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’১৬৩

২। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া : এ বিষয়টি একটি উন্নত নৈতিক পদ্ধতি যা মৃত্যুর পরও

সমাজে একজন মুসলমানের মর্যাদাকে রক্ষা ও সমুন্নত রাখার প্রমাণ বহন করে।

উপরন্তু সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ,ভালোবাসা,পারস্পরিক সম্প্রীতি ও অধিকার রক্ষার মনোবৃত্তিকে জাগরুক রাখে।

মহানবী (সা.) বলেছেন,‘ তোমাদেরকে আমি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম।

কিন্তু এখন হতে তোমরা কবর জিয়ারত কর এবং তাদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ ১৬৪

সাহাবীদের জীবন ও কর্মে রাসূল সা.-এর কবর জিয়ারত

৩। মৃতের অধিকার রক্ষা : নিঃসন্দেহে কোন কোন মৃত ব্যক্তি জীবিতদের উপর বিশেষ অধিকার রাখেন।

এই অধিকারের দাবী হলো জীবিতরা তাঁদের কবর জিয়ারত করবে। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন,‘

প্রতি ইমামের তাঁদের অনুসারীদের উপর অধিকার ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে যা পালনের

সর্বোত্তম পন্থা হলো তাঁদের কবর জিয়ারত।’ ১৬৫

টিকাঃ 

১৪২। মুস্তাদরাকে হাকিম,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৫৬০,হাদীস নং ৮৫৭১।

১৪৩। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯,হাদীস নং ৩।

১৪৪। বিহারুল আনওয়ার,৯৮তম খণ্ড,পৃ. ৩;আমালী,শেখ সাদুক,পৃ. ১১৬।

১৪৫। বিহারুল আনওয়ার,৯৮তম খণ্ড,পৃ. ৫।

১৪৬। সূরা নিসা : ৬৪।

১৪৭। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৬,হাদীস নং ১০৭,কিতাবুল জানাইজ;সহীহ তীরমিজী,৩য় খণ্ড,পৃ. ৩৭০।

১৪৮। ওয়াফা উল ওয়াফা,সামহুদী,২য় খণ্ড,পৃ. ৬১২।

১৪৯। উসদুল গাবা,১ম খণ্ড,পৃ. ৩০৭-৩০৮;মুখতাছারে তারিখে দামেস্ক,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১১৮,তাহজীবুল কামাল,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২৮৯।

১৫০। শিফাউস সিকাম,পৃ. ৫৫।

১৫১। তারিখে বাগদাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ১২০।

১৫২। তাহজীবুত তাহজীব,৭ম খণ্ড,পৃ. ৩৩৯।

১৫৩। সুনানে আবি দাউদ,২য় খণ্ড,পৃ. ২১৮,হাদীস নং ৩৫৭।

১৫৪। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৩৩।

১৫৫। সহীহ মুসলিম।

১৫৬। সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ১৩৬,কিতাবুস সালাত;সহীহ মুসলিম,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১২৬,কিতাবুল হজ্জ্ব।

১৫৭। ইহইয়াউল উলুম,গাজ্জালী,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪৭,সফরের আদব অধ্যায়।

১৫৮  আল বিদআহ,ডক্টর আবদুল মালিক সাদী,পৃ. ৬০।

১৫৯। আল লাজনাতুদ দায়িমাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ২৮৮।

১৬০। মাজমুয়াতু ফাতাওয়া,বিন বায,২য় খণ্ড,পৃ. ৭৫৭।

১৬১। প্রাগুক্ত,২য় খণ্ড,পৃ. ৭৫৩,৭৫৪।

১৬২। আল মুসান্নাফ,আব্দুর রাজ্জাক,৩য় খণ্ড,পৃ. ৫৭২;আস সুনান আল কুবরা,৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৩১।

১৬৩। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৬৫,হাদীস নং ১০৬;মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৮৬,হাদীস নং ৯৩৯৫;সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৫০১,হাদীস নং ১৫৭২।

১৬৪। আল মোজামুল কাবির,তাবরানী,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৪,হাদীস নং ১৪১৯।

১৬৫। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯,হাদীস নং ৩।

লেখকঃ  আলী আসগর রেজওয়ানী 

 অনুবাদঃ আবুল কাসেম 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button