EDUCATION

বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান

"বিশ্বনবী

বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান

আবু তালিব ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান এবং আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) এর পিতা।

মুসলমানদের অনেকেই মনে করেন তিনি রাসূল (স.) এর রেসালাতে বিশ্বাসী ছিলেন

এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের বিভিন্ন সমস্যার মুখে ও বিভিন্ন সংকটময় মুহূর্তে রাসূল (স.) এর একনিষ্ঠ সাহায্যকারী ও পূর্ণ আস্থাভাজন  ছিলেন।

রাসূল (সা.)’র পিতা আবদুল্লাহ (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) ছেলে মুহাম্মাদের (দ.) জন্মের আগেই ইন্তিকাল করেছিলেন।

বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?

এ সময় দাদা আবদুল মুত্তালিব (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)  ও

চাচা আবু তালিব শিশু নবীর দেখাশুনা বা ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেন।

আর আবদুল মুত্তালিবের ইন্তিকালের পর ভাইয়ের ছেলে  ৮ বছর বয়স্ক

মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিজের ঘরে এনে নিজ ছেলের মত লালন-পালন করেছিলেন চাচা আবু তালিব (রা.)।

ইতিহাস থেকে জানা যায় মহানবী (সা.)’র পিতা ও দাদা একত্ববাদী বা হানিফ ছিলেন এবং কোনো নবীর পিতাই কখনও কাফির ছিলেন না।

আবদুল্লাহ ও আবু তালিবের পিতা আব্দুল মুত্তালিব (আ.) নিজের জীবনের কঠিনতম সংকটে ও বিপদের সময়ও আল্লাহর ইবাদত  ত্যাগ করেননি

ও একত্ববাদের দ্বীনের সহায়তা করতে কুণ্ঠা বোধ করেননি।

যখন আবরাহার হস্তি সওয়ার বিশাল বাহিনী কা’বা গৃহ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে মক্কার দিকে অগ্রসর হয়

তখন পথিমধ্যে আব্দুল মুত্তালিবের কিছু উট তারা ধরে নিয়ে যায়।

অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব (আ.) যখন উটগুলো ফিরিয়ে নিতে তার কাছে আসলেন তখন আবরাহা আশ্চার্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করল:

উট ফেরত না চেয়ে কেন আমার বাহিনী ফেরত নিতে ও কা’বা ঘর ধ্বংস না করার আবেদন জানালে না?

তখন আব্দুল মুত্তালিব (আ.) আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান ও তাঁর ওপর ভরসা করে বললেন:

“আমি হলাম এই উটগুলোর মালিক আর এই কা’বা ঘরেরও প্রভু রয়েছেন তিনি সেটা রক্ষা করবেন।” (কামেলে ইবনে আসির)

এরপর তিনি মক্কার দিকে রওয়ানা দিলেন এবং কা’বা ঘরের কাছে এসে কা’বার দরজার কড়া ধরে বলেছিলেন:

“হে আমার প্রতিপালক! তুমি ছাড়া আমি কারো ওপর ভরসা করি না।

হে আমার প্রভু! (সকলের জন্য নির্ধারিত)নিজের এই  নিরাপদ আশ্রয় স্থলকে রক্ষা কর।

এই ঘরের শত্রুরা তোমার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত, তাদেরকে তোমার ঘর ধ্বংস করা হতে বিরত রাখো।” (কামেলে ইবনে আসির)

এই কথাগুলো হযরত আব্দুল মুত্তালিবের আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার স্পষ্ট দলিল। ইয়াকুবী নিজ ইতিহাস গ্রন্থে আব্দুল মুত্তালিব (আ.) সম্পর্কে লিখেছেন:

“আব্দুল মুত্তালিব মূর্তিপূজা থেকে দূরে ছিলেন এবং মহিমান্বিত ও গৌরবময় এক আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করতেন না।” (তারিখে ইয়াকুবি)

আব্দুল মুত্তালিবের দৃষ্টিতে আবু তালিব:

ইতিহাসের নানা পর্যায়ের দলিল প্রমাণের দিকে দৃষ্টি দিলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে,

কোনো কোনো স্বচ্ছ অন্তরের অধিকারী ও ভবিষ্যৎ প্রবক্তা আব্দুল মুত্তালিবকে মহানবীর (স.) উজ্জ্বল ভবিষ্যত এবং তাঁর নবুওয়্যত সম্পর্কে অবহিত করেন।

যখন সাইফ ইবনে যি ইয়াযান আবিসিনিয়ার  শাসনভার গ্রহণ করেন তখন আব্দুল মুত্তালিব এক প্রতিনিধি  দলের প্রধান হয়ে তার দরবারে উপস্থিত হন।

বাদশাহ কিছু মনোজ্ঞ বা বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষণের পর তাঁকে (আব্দুল মুত্তালিবকে) সুসংবাদ দেন যে,

তোমার বংশে এক সম্মানিত নবীর আগমন ঘটবে। অতঃপর তিনি মহানবী (স.) এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেন:

“তাঁর নাম হলো মুহাম্মাদ (স.)। (শৈশবেই) তাঁর বাবা-মা মৃত্যুবরণ করবেন

এবং তাঁর দাদা ও চাচা তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।” (সিরায়ে হালাবি)

তিনি বিশ্বনবী (সা.)’র আরো কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনার পর আব্দুল মুত্তালিবকে বলেন:

“নিঃসন্দেহে তুমিই তার পিতামহ, হে আব্দুল মুত্তালিব।” (সিরায়ে হালাবি)

আব্দুল মুত্তালিব এ সুসংবাদ শোনার পর শুকরানার সিজদা আদায় করে উক্ত অনাগত পবিত্র শিশুটি সম্পর্কে বললেন:

“আমার অতি প্রিয় এক সন্তান ছিল।

এক মহিমান্বিত রমণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিলাম যার নাম আমেনা বিনতে ওয়াহাব ইবনে আব্দে মানাফ ইবনে যোহরাহ।

সেই রমণী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় যার নাম রেখেছি মুহাম্মাদ।

কিছু কাল পর তাঁর পিতা-মাতা ইন্তেকাল করলে আমি ও তাঁর চাচা  তাঁর দেখাশুনার দায়িত্ব নিই।” (সিরায়ে হালাবি)

এটা স্পষ্ট যে, আব্দুল মুত্তালিব ওই এতিম শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যত সম্পর্কে অবহিত ছিলেন বলেই

তিনি নিজের পর ওই শিশুর প্রতিপালনের দায়িত্ব নিজের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান

আবু তালিবের হাতে অর্পণের উদ্যোগ নেন এবং অন্যদেরকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন।

এও স্পষ্ট যে, আবু তালিব নিজের একত্ববাদী ও মু’মিন পিতার দৃষ্টিতে ঈমানের ওই উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

তাই সন্তানদের মধ্য হতে কেবল তিনিই রাসূল (স.) এর লালন-পালনের জন্য যোগ্য বিবেচিত হলেন।

হযরত আবু তালিব (রা.)-এর ঈমানের দলিল-প্রমাণ:

১। আবু তালিবের সাহিত্য-কর্ম ও ইলমী রচনা :

ইসলামী ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসরা আবু তালিবের কিছু সুললিত ও প্রাঞ্জল কাসিদা (বিশেষ ধরনের  কবিতা বা গীতি) বর্ণনা করেছেন।

উচ্চ মানের ওই কবিতাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন পংক্তির অর্থ হতে আমরা তাঁর ঈমান আনার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি।

তাঁর বহু কবিতার মধ্য হতে কেবল কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি:

“সম্মানিত লোকদের জানা উচিত যে- মুহাম্মাদ (স.) হযরত মূসা ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের মতোই একজন নবী।

আর যে হেদায়েত বা মুক্তির দিশা তাদের কাছে ছিল তাঁর কাছেও তা রয়েছে।

সুতরাং, সব নবীই আল্লাহর নির্দেশে মানুষকে হেদায়েত করেন এবং গুনাহ হতে বিরত রাখেন।”

(আল হুজ্জা ও মুসতাদরাকে হাকিম)

“তোমরা কি জানো না যে, আমরা মুহাম্মাদ (স.)-কে মূসা (আ.) এর মতো একজন নবী হিসেবে

পেয়েছি যার বর্ণনা আসমানী গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হয়েছে?

লোকেরা তাঁকে ভালোবাসে, আর মহান আল্লাহ যার ভালোবাসা মানুষের অন্তরে দিয়েছেন তাঁর প্রতি অন্যায় করা সমীচীন নয়।” (তারিখে ইবনে কাসির)

“মহান আল্লাহ নিজ নবী মুহাম্মাদকে সম্মানিত করেছেন। অতএব, সর্বোত্তম সৃষ্টি হলেন আহমাদ।

মহান আল্লাহ পয়গম্বরের নামকে নিজের নামের শব্দমূল থেকেই নির্ধারণ করেছেন যাতে তাকে সম্মান দান করতে পারেন।

সুতরাং, আরশ অধিপতি হলেন ‘মাহমুদ’ (প্রশংসিত) এবং তাঁর নবী হলেন আহমাদ (অধিক প্রশংসাকারী)।’ (শারহে নাহজুল বালাগাহ)

“হে আল্লাহর রাসূল (স.), আমি মাটির বিছানায় না ঘুমানো পর্যন্ত (মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত)

শত্রুর হাত কখনই তোমার পর্যন্ত পৌঁছাবে না।

অতএব, ভয় পেয়ো না, যে সব বিষয়ের জন্য তুমি নির্দেশিত হয়েছ সেগুলো (নির্ভিকচিত্তে) প্রকাশ কর

ও সুসংবাদ দাও এবং চোখগুলোকে নূরান্বিত কর।

তুমি আমাকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছ আর আমি এটাও জানি যে,

তুমি আমার মঙ্গল কামনা কর এবং নিজের দাওয়াতের ক্ষেত্রে দৃঢ় ও সৎ।

আমি স্পষ্টভাবে জানতাম যে, মুহাম্মাদের দ্বীন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন।” (খাজানাতুল আদাব বাগদাদি)

“হে আমার ওপর আল্লাহর সাক্ষী, তুমি সাক্ষ্য দিও আমি আহমাদ বা রাসূল (স.) এর দ্বীনের প্রতি ঈমান আনলাম,

যে ব্যক্তিই পথভ্রষ্ট হোক না কেন আমি হেদায়াতের মধ্যেই রয়েছি ।” (শারহে নাহজুল বালাগাহ)

আবু তালিব নিজের জীবনের শেষ দিগুলোতে রাসূল (স.) এর সাহায্যার্থে কোরাইশ গোত্রপতিদের উদ্দেশে নিম্নোক্ত কবিতাটি রচনা করেন:

“চারজনকে সত্য বা কল্যাণের নবী (স.)-এর সহযোগিতা করার তাগিদ দিচ্ছি: আমার পুত্র আলী,

আমাদের  গোত্রের প্রধান আব্বাস,

খোদার সিংহ হামযাহ যে তার সত্য (ঈমানকে) রক্ষা করছে

এবং আমার আরেক পুত্র জাফারকে যাতে তাঁর সাথী ও সহযোগী হতে পারে।

তোমরা- আমার মা ও তাঁর সন্তানরা তোমাদের জন্য উৎসর্গ হোক- সদা রাসূল (স.) এর জন্য শত্রুর বিরুদ্ধে ঢালের মত থেকো।”

২। রাসূল (স.) এর সঙ্গে আবু তালিবের আচরণই তাঁর মজবুত ঈমানের অন্যতম দলিল:

সব প্রসিদ্ধ মুসলিম ঐতিহাসিক রাসূল (স.)-এর সুরক্ষার জন্য হযরত আবু তালিব (রা.)’র

নজিরবিহীন আত্মত্যাগ ও কোরবানিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। আর এটাই তাঁর দৃঢ় ঈমানের আরো একটি স্পষ্ট দলিল।

আবু তালিব ইসলামের সাহায্যার্থে ও রাসূল (স.) এর রক্ষার্থে নিজের জীবনের তিনটি বছর উদ্বাস্তুর ন্যায় রাসুল (স.)

এর পাশে ‘শো’বে আবুতালিব’-এ অবস্থান করাকে কুরাইশদের নেতৃত্ব দেয়ার ওপর প্রাধান্য দেন

এবং মুসলমানদের ওপর আরোপিত উক্ত অর্থনৈতিক (ও সামাজিক) বয়কটের শেষ দিন অবধি

অসহনীয় নানা কষ্ট সহ্য করেও তাদের পাশে অবস্থান করেন। মক্কার ওই অঞ্চলটি এখনও শোবে আবি তালিব নামে খ্যাত।

এ ছাড়াও হযরত আবু তালিব নিজ পুত্র আলী (আ.) কে, রাসূল (স.)- এর সর্বাত্মক সহযোগিতা করার নির্দেশ

দেন এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের সব কঠিন সংকটে তাঁর পাশে অবস্থান করতে বলেন।

(মো’তাযেলী মতবাদে বিশ্বাসী)

সুন্নি মনীষী ইবনে আবিল হাদীদ মো’তাযেলী নাহজুল বালাগাহ’র ব্যাখ্যায় হযরত আবু তালিব (আ.)

হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি নিজ পুত্র আলী (আ.) কে বলেন: “আল্লাহর রাসূল (স.)

তোমাকে সত্য ছাড়া অন্য কিছুর দিকে  তোমাদের আহ্বান জানাননি। অতএব, তুমি সর্বদা তাঁর সঙ্গে  থেকো।”

এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর রাসূল (স.) -কে রক্ষা এবং ইসলামের পবিত্র অস্তিত্ব রক্ষার জন্য

হযরত আবু তালিবের এমন যথাযোগ্য খেদমত ও আন্তরিক ত্যাগ বা কষ্ট স্বীকার তাঁর ঈমানের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ।

এ কারণেই অন্যতম মুসলিম মনীষী ইবনে আবিল হাদীদ, রাসূল (স.) এর রক্ষণাবেক্ষণ ও

তাঁর পবিত্র ধর্মের রক্ষায় হযরত আবু তালিবের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে লিখেছেন:

“যদি আবু তালিব ও তার সন্তান না থাকতেন তবে কখনই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হতো না।

তিনি মক্কায় আল্লাহর রাসূল (স.)-কে আশ্রয় দিয়েছিলেন ও সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর পুত্র মদিনাতে রাসূল (স.)

এর সাহায্যার্থে মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কেউই আবু তালিবের সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

না অর্থহীন কথা বলতে অভ্যস্ত মূর্খরা, আর না ওই জ্ঞান-পাপী ব্যক্তিরা যারা সত্যকে দেখেও তা স্বীকার করে না।”

বিশ্বনবী (সা.)’র চা চা মুস লমান হয়েই ইন্তিকাল করেছিলেন

৩। আবু তালিবের ওসিয়ত তাঁর ঈমানের অপর এক দলিল:

প্রখ্যাত ইসলামী ঐতিহাসিকরা যেমন: হালাবী শাফেয়ী নিজ সীরাহ’তে, মুহাম্মাদ দিয়ার বাকরী তারিখুল খামীস গ্রন্থে,

আবু তালিবের শেষ বাণী বর্ণনা করেছেন।

তিনি নিজ গোত্রকে রাসূল (স.) এর সাহায্যের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন:

“হে আমার আত্মীয়-স্বজনরা!

মুহাম্মাদকে ভালোবাস, তাঁকে অনুসরণ কর এবং তাঁর দলকে (ইসলাম) সাহায্য কর।

আল্লাহর কসম যেই-ই তার হেদায়েতের নূরের অনুসরণ করবে সে সফলকাম হবে।

যদি আমি আরো

বেশি দিন বেঁচে থাকতাম এবং মৃত্যু আমাকে সময় দিত, তবে নিঃসন্দেহে আমি তাঁর সব কষ্ট ও বাধা দূর করে দিতাম।

এই বলেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।” (তারিখুল খামিস ও সিরায়ে হালাবি)

৪। আবু তালিবের প্রতি রাসূল (স.)এর ভালোবাসা তাঁর ঈমানেরই সাক্ষ্য স্বরূপ:

আল্লাহর রাসূল (স.) বিভিন্ন  সময়ে ও অবস্থায় নিজ চাচার প্রশংসা করে তাঁর প্রতি সম্মান

দেখাতেন এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতেন।

সেই দৃষ্টান্তগুলোর মধ্য হতে শুধুমাত্র দু’টির প্রতি ইশারা করছি:

ক. কোনো কোনো ঐতিহাসিক নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মহানবী (স.) আক্বীল ইবনে আবি তালিবকে বলেন:

“আমি তোমাকে দু’টি কারণে ভালোবাসি; (প্রথমত) আমার সঙ্গে আত্মীয়তার

সম্পর্কের কারণে এবং (দ্বিতীয়ত) আমি জানি যে আমার চাচা (আবু তালিব) তোমাকে খুব ভালোবাসতেন।” (তারিখুল খামিস)

বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?

বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?বিশ্বনবীর চাচা কি মুসলমান ?

খ. হালাবীও নিজ সীরাহ’তে আল্লাহর রাসূল (স.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাঁর প্রিয় চাচাকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বলেন-

“যতদিন আবু তালিব জীবিত ছিলেন কুরাইশের কাফেররা ততদিন আমার কোন মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারেনি।” (সিরায়ে হালাবি)

এটা স্পষ্ট যে, হযরত আবু তালিবের প্রতি হযরত মহানবী (স.) এর ভালোবাসা এবং তাঁর সুউচ্চ ব্যক্তিত্বের প্রতি

মহানবী (সা.) এর  গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন হযরত আবু তালিবের ঈমানেরই প্রমাণ স্বরূপ।

কেননা আল্লাহর রাসূল (স.) কোরআন ও হাদিসের সাক্ষ্য অনুযায়ী

কেবল মু’মিনদেরকেই ভালোবাসেন এবং কাফের ও মুশরিকদের ব্যাপারে কঠোর।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে:

“মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সহচররা কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল…।” (সুরা ফাতহ:২৯)

অন্য এক স্থানে বলা হচ্ছে:

“যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে,

তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না,

যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জাতি-গোষ্ঠী হয়।

তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন…।” (সুরা মুজাদালাহ:২২)

উক্ত আয়াতগুলোর আলোকে এবং আবু তালিবের প্রতি রাসূল (স.) এর

গভীর ভালোবাসাসহ বিভিন্ন সময়ে চাচার প্রতি তাঁর ব্যতিক্রমধর্মী প্রশংসা বা সম্মান প্রদর্শনের আলোকে বলা যায়,

মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) এর ওপর আবু তালিব (আ.) এর ঈমান আনার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে সত্য।

৫। রাসূল (স.) এর সাহাবীদের সাক্ষ্য:

রাসূল (স.) এর সাহাবীদের একটি দল আবু তালিবের দৃঢ় ঈমানের সত্যতার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন

যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা হল:

ক. একদিন এক অজ্ঞ ব্যক্তি আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) এর সামনে আবু তালিবের ওপর মিথ্যা আরোপ করল।

তখন আলী (আ.) এর চেহারায় ক্রোধ ফুটে ওঠে এবং তিনি বলেন:

“চুপ কর! আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙে দিন। কসম ওই আল্লাহর, যিনি হযরত মুহাম্মাদ (স.)-কে

নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন, যদি আমার পিতা (আবু তালিব) চান সব

পাপীর শাফায়াত করতে তবে আল্লাহ পাক তাকে শাফায়াতকারী হিসেবে মনোনীত করবেন।” (আল হুজ্জা,২৪)

অপর এক স্থানে বর্ণিত হয়েছে:

“আল্লাহর কসম- আবু তালিব, আব্দে মানাফ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব খাঁটি মু’মিন এবং মুসলমান ছিলেন।

তিনি নিজের ঈমানকে কুরাইশদের সম্মুখে গোপন করতেন যাতে কুরাইশরা বনি হাশিম

গোত্রের সঙ্গে শত্রুতা না করে।” (আল হুজ্জা)

হযরত আলীর (আ.) এমন কথা শুধু আবু তালিবের ঈমানের সত্যতারই প্রমাণ বহন করে না বরং

তাঁকে আল্লাহর অলিদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে অন্যদের শাফায়াত করতে সক্ষম হবেন।

খ. আবুযার গিফারী আবু তালিবের ঈমান সম্পর্কে বলেন:

“ওই প্রভুর কসম যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, আবু তালিব (রা.)ইসলাম গ্রহণ করা

ব্যতীত ইন্তেকাল করেননি (অর্থাৎ তিনি ঈমান নিয়েই মৃত্যু বরণ করেছিলেন)।” (শারহে নাহজুল বালাগাহ)

গ. আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ও  আবি বাকর ইবনে ক্বাহাফাহ(প্রথম খলিফা) হতে বহু সনদের মাধ্যমে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েতটি বর্ণিত হয়েছে,

“আবু তালিব, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলা ছাড়া ইন্তেকাল করেননি।” (আল গাদির)

৬। আহলে বাইত (আ.) এর দৃষ্টিতে আবু তালিব:

আহলে বাইত (আ.) এর সব ইমামই আবু তালিবের দৃঢ় ঈমানের সত্যতার বিষয়টি যে সত্য

তা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন এবং বিভিন্ন সময়ে বা উপলক্ষে রাসূল (স.) এর

এই আত্ম-উৎসর্গীকৃত সাথীর পক্ষে কথা বলেছেন, (এর দৃষ্টান্ত অসংখ্য) তার মধ্যে কেবল

একটি প্রতি এখানে ইশারা করা হলো- ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আল্লাহর রাসূল (স.) হতে বর্ণনা করেন যে,

“আসহাবে কাহাফ (কিছু কল্যাণকর বিষয়ের জন্য) নিজেদের ঈমান গোপন করে কুফর প্রকাশ করতেন।

এই কারণে মহান আল্লাহ তাদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করেন। আবু তালিবও নিজের ইসলামকে গোপন

করেছিলেন (কোনো কল্যাণকর বিষয়ের জন্য) এবং শিরক প্রকাশ করেছিলেন ।

তাই আল্লাহতায়ালা তাঁকেও দু’বার পুরস্কৃত করেন।” (শারহে নাহজুল বালাগাহ)

তাই এটা স্পষ্ট  আবু তালিব  ঈমানদার ছিলেন। যেসব অন্যায় ও অবৈধ অপবাদ আবু তালিবের

ওপর আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। শুধু রাজনৈতিক কোনো

উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসের কিছু শাসকের উস্কানিতে এসব অপবাদ প্রচার করা হয়েছে।

বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাসের শাসকরা সর্বদা আহলে বাইত (আ.) এবং আবু তালিবের সন্তানদের সঙ্গে শত্রুতা করেছেন।

এ পর্যায়ে একটি বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি। আর তা হলো- রাসূল (স.) এর একনিষ্ঠ সাথী আবু তালিব (রা.)’র

ব্যক্তিত্ব খর্ব করার যে অপচেষ্টা শত্রুরা করেছিল  সেটা হাদিসে “দ্বাহদ্বাহ” নামে পরিচিত।

কিন্তু এই হাদিসটি বং কোরআনের পবিত্র আয়াত ও রাসূল (স.) এর তর্কাতীত সুন্নাত এবং

বুদ্ধিবৃত্তিক  নানা দলিলের আলোকে ভিত্তিহীন।

হাদিসে দ্বাহদ্বাহ’র পর্যালোচনা :

কিছু কিছু লেখক যেমন: বুখারী, মুসলিম, ‘সুফিয়ান ইবনে সাঈদ সুরী’, ‘আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর’, ‘

আব্দুল আযিয ইবনে মুহাম্মাদ দুরাওয়ারদী, এবং ‘লাইস ইবনে সাঈদ’ হতে নিম্নোক্ত

দু’টি কথা রাসূল (স.) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন ;

ক. তাঁকে (আবু তালিবকে) আগুনের মধ্যে পেলাম অতঃপর তাকে দ্বাহদ্বাহ’তে  স্থানান্তরিত করলাম।

(আমার খাতিরেই তাকে আগুনের অগভীর অংশে আনা হয়েছে, তা না হলে তাকে আগুনের সবচেয়ে গভীর অংশে রাখা হত!)

খ. হয়তো বা কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত তাঁর (আবু তালিবের) কাজে আসবে।

তাই তাকে জাহান্নামের আগুনের একটি অগভীর গর্তে রাখা হবে যে আগুনের উচ্চতা তাঁর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পৌঁছাবে।

কিন্তু এতেই তার মগজ (টগবগ করে) ফুটতে থাকবে।”

যদিও আবু তালিব (রা.) যে ঈমানদার ছিলেন তার পক্ষে অসংখ্য রেওয়ায়েত ও স্পষ্ট দলিলগুলো

হাদিসে দ্বাহদ্বাহসহ আরোপিত সব অন্যায় অপবাদের  ভিত্তিহীনতা প্রকাশ করেছে,

তারপরও আরো বেশি স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে এখানে দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে হাদিসে দ্বাহদ্বাহ’র পর্যালোচনা তুলে ধরা হল:

১। সনদগত ভিত্তিহীনতা।

২। আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স.) এর সুন্নাতের সঙ্গে এই (মিথ্যা) হাদিসটির বৈপরীত্য।

হাদিসে দ্বাহদ্বাহ’র সনদগত ভিত্তিহীনতা:

যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, হাদিসে দ্বাহদ্বাহ-এর বর্ণনাকারীরা হলেন যথাক্রমে: ‘সুফিয়ান ইবনে সাঈদ সুরী’, ‘

আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর’, ‘আব্দুল আযিয ইবনে মুহাম্মাদ দেরাওয়ারদি’ এবং ‘লাইস ইবনে সাঈদ’।

আহলে সুন্নাতের রেজাল শাস্ত্রের  পণ্ডিত ব্যক্তিত্বদের (যারা হাদিস বর্ণনাকারী রাবী ও

মুহাদ্দিসদের সম্পর্কে আলোচনা করে থাকেন) দৃষ্টিতে হাদিসে দ্বাহদ্বাহ’র রাবীদের অবস্থান :

ক. সুফিয়ান ইবনে সাঈদ সুরী

আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমাদ ইবনে উসমান যাহাবী আহলে সুন্নাতের রেজাল শাস্ত্রের একজন

প্রসিদ্ধ মনীষী। তিনি সুরী সম্পর্কে বলেছেন:

“সুফিয়ান ইবনে সুরী জাল হাদিসগুলোকে দুর্বল রাবী হতে বর্ণনা করত।”

উক্ত বাক্য হতে স্পষ্ট যে, সুফিয়ান সুরীর বর্ণনাগুলো প্রতারণামূলক। আর দুর্বল রাবী এবং অপরিচিত ব্যক্তি হতে হাদিস বর্ণনা করার কারণেই তার বর্ণনা করা সব রেওয়ায়েতই মূল্যহীন।

খ. আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর

যাহাবী তার সম্পর্কে বলেন:

“ অতি বৃদ্ধ হওয়াতে তার স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছিল।”

আবু হাতেম বলেন, স্মৃতি-বিভ্রাটের কারণে হাদিস সংরক্ষণের শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল

এবং তার মুখস্থ শক্তিও লোপ   পেয়েছিল। আহমাদ ইবনে হাম্বাল বলেন:

আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর হলো দুর্বল (রাবীদের অন্যতম) এবং বহু ভুল করত

(অর্থাৎ ভিত্তিহীন ও জাল রেওয়ায়েত বর্ণনা করত)।

ইবনে মুঈন বলেন: সে সঠিক এবং ভুল হাদিসের মিশ্রণ ঘটাত।

ইবনে খারাশ বলেন: শো’বাহও তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল না।

কুসাজ, আহমাদ ইবনে হাম্বাল হতে বর্ণনা করেন, যিনি (আহমাদ ইবনে হাম্বাল)

আব্দুল মালেক ইবনে উমাইরকে (রেওয়ায়েত বর্ণনায়) দুর্বল তথা অত্যন্ত যায়িফ বা দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।”

উপরোক্ত আলোচনা হতে স্পষ্ট যে, আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর নিম্নলিখিত বৈশিষ্টগুলোর অধিকারী:

১.    দুর্বল স্মৃতিশক্তি ও ভুলো মনের অধিকারী অধিকারী।

২.    দুর্বল ( রেজাল শাস্ত্রের দৃষ্টিতে) অর্থাৎ যে ব্যক্তির রেওয়ায়েতে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না।

৩.    (তার রেওয়ায়েত) ভুলে পরিপূর্ণ।

৪.    মিশ্রণকারী (যে ব্যক্তি সঠিক রেওয়ায়েতের সঙ্গে মিথ্যা রেওয়ায়েতের মিশ্রণ ঘটায়)।

এটা স্পষ্ট, যে সব বৈশিষ্ট্য আব্দুল মালেক ইবনে উমাইর সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর

প্রত্যেকটি তার হাদিসগুলোর ভিত্তিহীনতা প্রমাণে যথেষ্ট। আর ওই সব ত্রুটি সম্মিলিতভাবে তার মাঝে বিদ্যমান ছিল।

গ. আব্দুল আযিয ইবনে মুহাম্মাদ দুরাওয়ারদি:

রেজাল শাস্ত্রে আহলে সুন্নাতের পণ্ডিতরা তাকে দুর্বল স্মৃতিশক্তি ও ভুলো মনের অধিকারী হিসেবে

আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন দুরাওয়ারদি’র স্মৃতিশক্তি এত দুর্বল যে তার

রেওয়ায়েতের ওপর নির্ভর করা যায় না বা সেসবের সহায়তায় কোন যুক্তি প্রদর্শন করা সম্ভব নয়।

আহমাদ ইবনে হাম্বাল ‘দুরাওয়ারদি’ সম্পর্কে বলেন:

“যখনই সে তার স্মৃতিশক্তির সহায়তায় রেওয়ায়েত বর্ণনা করত তখন অসংলগ্ন বা অপ্রাসঙ্গিক ও বাতিল বা ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলত।”

আবু হাতেম তার সম্পর্কে বলেন:

“তার কথার ওপর নির্ভর করা যায় না বা তার কথার স্বপক্ষে কোনরূপ যুক্তি প্রদর্শন করা সম্ভব নয়।”

আব যারাআহ-ও তাকে ((سيّيء الحفظ))   “দুর্বল স্মৃতি শক্তির অধিকারী ” বলে উল্লেখ করেছেন।

ঘ. লাইস ইবনে সাঈদ:

আহলে সুন্নাতের রেজাল শাস্ত্রের গ্রন্থাবলী অধ্যয়নে এই বিষয়টি স্পষ্ট অনুধাবনীয় যে,

যে সব রাবীর নাম ‘লাইস’ তারা সবাই অপরিচিত ও দুর্বল তথা যায়িফ

এবং তাদের হাদিসে বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না।

আর লাইস ইবনে সাঈদও অন্যতম যায়িফ ও বেপরোয়া এবং অমনোযোগী রাবী (বর্ণনাকারী) ও

হাদিস শোনার ক্ষেত্রে ছিল অসাবধান ( অর্থাৎ কি শুনতে হবে ও কি বর্ণনা করতে হবে

সে বিষয়ে তিনি সুস্থির ছিলেন না)। আর যারা তার হতে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে তারাও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন তার সম্পর্কে বলেন:

“লাইস ইবনে সাঈদ যাদের কাছ থেকে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছে  (তাদের চেনার ক্ষেত্রে)

এবং হাদিস  শোনার ক্ষেত্রে অসাবধান ছিল, অর্থাৎ কার কাছ থেকে এবং কোন বিষয়ের বা কোন ধরনের  হাদিস বর্ণনা করতে হবে সে ব্যাপারে তিনি সাবধান ছিলেন না।”

‘নাবাতী’ তাকে দুর্বলদের অন্যতম বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজ গ্রন্থ ‘আত্ তাযলীল আলাল

কামেল’-এ তার (লাইস ইবনে সাঈদ) নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি এ বইটি শুধু দুর্বল রাবীদের পরিচয় তুলে ধরার জন্যই লিখেছেন ।

এ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে তা হতে স্পষ্ট হয় যে, হাদিসে দ্বাহদ্বাহ-এর প্রধান বা মূল রাবীরাই ছিলেন যায়িফ তথা

দুর্বল। আর এ কারণেই তাদের হাদিসে বিশ্বাস করা যায় না।

হাদিসে দ্বাহ্দ্বাহ্ কোরআন ও সুন্নাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়:

উল্লিখিত হাদিসটিকে রাসূল (স.) এর সঙ্গে এভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যে,

তিনি হযরত আবু তালিবকে দোযখের বৃহৎ অগ্নিকুণ্ড বা ব্যাপক আগুনের স্তর হতে বের করে কম

আগুনের একটি গর্তে স্থানান্তরিত করলেন। আর এভাবে তার আযাবে হ্রাস ঘটানো হলো।

অথবা  কেয়ামতের দিন তাকে শাফায়াত করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। অথচ কোরআন ও রাসূল (স.)

এর সুন্নাত একমাত্র মু’মিন ও মুসলমানদের জন্যই শাস্তি  হ্রাস ও শাফায়াতের বিষয়টিকে সমর্থন করে।

অতএব, যদি আবু তালিব কাফের হয়ে থাকে তবে আল্লাহর রাসূল (স.) কখনই তার আযাব কমাতে

অথবা তাকে শাফায়াত করতে সক্ষম নন।

এভাবেই ‘হাদিসে দ্বাহদ্বাহ’-এর বক্তব্য বা বিষয়বস্তুর ভিত্তিহীনতা তথা যারাই আবু তালিবকে কাফের

জ্ঞান করেন তাদের দাবির অসারতা প্রমাণিত হয়।

এ পর্যায়ে কোরআন ও রাসূল (স.) এর হাদিসের আলোকে উল্লিখিত বিষয়ের ওপর আরো কিছু সুস্পষ্ট দলিল তুলে ধরা হল:

ক. এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে:

وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ

“আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও

দেয়া হবে না যে তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক কাফেরকে বা অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।”

খ. রাসূল (স.) এর সুন্নাতও কাফেরদের শাফায়াতের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে। আবুযার গিফারী আল্লাহর রাসূল (স.) হতে বর্ণনা করেন:

أُعطيت الشفاعة و هی نائلةٌ من أمتی مَن لا يشرک بالله شيئاً

“আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার শাফায়াত পাবে যে আল্লাহকে কোনো কিছুর সঙ্গে শরিক করেনি।”

অতএব, আবু তালিবকে কাফের হিসেবে তুলে ধরা সংক্রান্ত হাদিসে দ্বাহদ্বাহ ভিত্তিহীন এবং কথিত এ হাদিস

আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (স.)-এর সুন্নাতের বিপরীত

আবু তালিব ছিলেন আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান এবং আমিরুল মু’মিনীন আলী (আ.) এর পিতা।

মুসলমানদের অনেকেই মনে করেন তিনি রাসূল (স.) এর রেসালাতে বিশ্বাসী ছিলেন

মুহাম্মাদ (সঃ) এর পিতা মাতা কে কবর থেকে তুলে কি মুসলমান বানানো হয়েছে,চাচা আবু তালিব,কিভাবে হযরত হামযা (রঃ) ইন্তেকাল করেন?,নবীজির চাচা আবু তালিব,নবীর জন্মের আগে কি ঘটেছিল আজব বয়ান,নবীজির চাচা,নবীর জন্মের আগে কি ঘটেছিল,রসুলের চাচা আবু তালিব,মুহাম্মাদ (সঃ) এর চাচা,রাসুলের চাচা,পরকালে মুহাম্মাদ (সঃ) এর পিতা মাতা কি জাহান্নামে যাবে,রাসূল সাঃ এর উপর ওহী আসার পরে কি ঘটেছিলো,মুহাম্মাদ ( সঃ) এর পিতা মাতা কি জাহান্নামি,মানুষ মারা গেলে কি আত্মা ৪০ দিনে ফিরে আসে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button