সুরা নুহের প্রাথমিক ব্যাখ্যা.
সুরা নুহের প্রাথমিক পরিচিত ও কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা
সুরা নুহের প্রাথমিক ব্যাখ্যা
সুরা নুহ পবিত্র কুরআনের ৭১ তম সুরা এবং মক্কায় নাজিল-হওয়া এ সুরায় রয়েছে ২৮ আয়াত। হযরত নুহ নবীর ঘটনা নিয়ে আলোচনার কারণেই এ সুরাটির নাম রাখা হয়েছে এই মহান নবীর নামে। নুহ নবীর ঘটনা সুরা নুহ ছাড়াও সুরা শোয়ারা, মুমিনুন, আরাফ, আম্বিয়া ও সুরা হুদে এসেছে।
সুরা নুহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার আধার। এ সুরা আমাদের শেখায় যে শত্রুর কাছেও সত্যের দাওয়াত দিতে হবে এবং এ জন্য অকাট্য নানা যুক্তি তুলে ধরতে হবে ভালবাসা ও আন্তরিকতাসহ। আর আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোর ক্ষেত্রে ক্লান্ত ও মনমরা হওয়া উচিত নয়। সত্যের পথে আহ্বান জানানোর কৌশল হিসেবে একদিকে দেখাতে হবে খোদায়ী পুরস্কারের উৎসাহ ও অন্যদিকে খোদায়ী শাস্তির ভয় বা সতর্কবাণী। এ সুরায় কাফির মুশরিকদের একগুঁয়েমির বিষয়ে সতর্ক করে বলা হয়েছে, সত্যকে মেনে না নিলে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি।
কুরআনে বর্ণিত নবী-রাসুলরা নানা সংকটপূর্ণ সময়ে মানবজাতির কাছে খোদায়ী বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং তাঁরা বিপ্লবী ভূমিকা রেখে মানবজাতির ভাগ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। হযরত নুহ (আ) ছিলেন এমনই একজন শীর্ষস্থানীয় নবী ও রাসুল। তাঁর কাছে নাজিল হয়েছিল আসমানি কিতাব ও শরিয়তের বিধান। সুরা নুহের প্রথম দুই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের প্রতি একথা বলে: তুমি তোমার সম্প্রদায়কে সতর্ক কর,তাদের প্রতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার আগে। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে স্পষ্ট সতর্ককারী।
-মহাবিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার মানে হচ্ছে মানুষকে ওই মহাবিপদ এড়ানোর জন্য প্রস্তুত হতে বলা ঠিক যেভাবে বিপদ-ঘণ্টা বেজে উঠলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়-স্থলে আশ্রয় নেয়। নবী-রাসুলরাও ঠিক একই কাজ করেন। তারা হুঁশিয়ারি দেন কাফির ও মুশরিকদেরকে। তাঁরা বলেন, তোমাদের শিরকযুক্ত অপবিত্র ও অন্যায় বিশ্বাসগুলো ধ্বংসাত্মক এবং নিজ হাতে সেই ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনার আগেই শির্ক, জুলুম ও পাপাচার থেকে পবিত্র হও।
সুরা নুহের প্রাথমিক ব্যাখ্যা
হযরত নুহ নবীর যুগে পাপাচার ও অনাচার ছড়িয়ে পড়েছিল। জনগণ একত্ববাদ ও ন্যায়বিচারকে এড়িয়ে চলত এবং মূর্তি পূজায় মশগুল হয়। দিনকে দিন বাড়ছিল শ্রেণী-বৈষম্য তথা ধনী ও গরিবের ব্যবধান। সবলরা দুর্বলদের অধিকার পদদলিত করত এবং বলদর্পী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা অধীনস্ত ব্যক্তিদের নানাভাবে বঞ্চিত করছিল। আর এমনই পরিস্থিতিতে হযরত নুহ (আ) নবী হিসেবে মনোনীত হন। তাঁকে দেয়া হয় ধর্মগ্রন্থ ও জীবন-বিধান।
হযরত নুহ (আ) জনগণকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করলেন এবং মিথ্যা বা বাতিল খোদাগুলোকে বর্জন করতে বললেন। তিনি জনগণকে লেনদেনসহ সব কাজে সব সময় সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ হতে বললেন। সুরা নুহের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতে এসেছে: তিনি অর্থাৎ নুহ বললেন, তোমরা আল্লাহ তা’আলার ইবাদত কর,তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার নির্ধারিত কাল বা মৃত্যুর সময় যখন হবে, তখন অবকাশ দেয়া হবে না,যদি তোমরা তা জানতে!
সুরা নুহের চতুর্থ আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে মানুষের রয়েছে দুই ধরনের আয়ু বা মৃত্যুর ক্ষণ। এক ধরনের মৃত্যুর ক্ষণ পরিবর্তনযোগ্য। মানুষের পাপ বা সৎকর্মের কারণে এই সময়-সীমা এগিয়ে আসতে বা পিছিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মৃত্যুর একটি চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ সময়-সীমা রয়েছে যা অনিবার্য বা অবধারিত এবং তা কিছুতেই পরিবর্তন করা হয় না।
অর্থাৎ এ আয়াত থেকে স্পষ্ট পাপ মানুষের হায়াত কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে ঈমান ও খোদাভীতি মানুষের মৃত্যুকে পিছিয়ে দেয়। পাপ মানুষের মন ও শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। ইমাম সাদিক (আ) বলেছেন, পাপের কারণে অসময়ে মৃত্যুর শিকার হন এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা খোদায়ী মৃত্যু তথা সততা নিয়ে মৃত্যুর শিকার হওয়া ব্যক্তিদের চেয়ে অনেক বেশি। অন্যদিকে সৎ কাজের কারণে যাদের আয়ু বাড়ে তাদের সংখ্যা প্রাকৃতিক নানা কারণে বর্ধিত আয়ুর অধিকারী ব্যক্তিদের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
সুরা নুহের প্রাথমিক ব্যাখ্যা.
সুরা নুহের পঞ্চম আয়াত থেকে পরের কয়েকটি আয়াতে হযরত নুহ নবীর বক্তব্য এসেছে। তিনি মহান আল্লাহর কাছে তার জাতি সম্পর্কে নালিশ করে বলছেন:
সে অর্থাৎ নুহ বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি; কিন্তু আমার দাওয়াত তাদের পলায়নকেই বৃদ্ধি করেছে।
আমি যতবারই তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি,যাতে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন, ততবারই তারা কানে আঙ্গুল দিয়েছে,মুখমন্ডল বস্ত্রাবৃত করেছে,জেদ করেছে এবং খুব ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে।
-যাদের হৃদয় সত্যকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত নয় তারা সত্যের আহ্বান শুনলে কোমল বা নমনীয় না হয়ে ঔদ্ধত্য দেখায় এবং সত্যের আহ্বানকে নাকচ করে ও সত্যের মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে! ফলে তারা খোদা থেকে দূরে সরে পড়ে এবং তাদের মধ্যে কুফরি ও কপটতার শেকড় জোরালো হয়।
তাই দেখা যায় নুহ নবীর সত্যের দাওয়াত ও তাদের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে এই মহান নবীর ক্ষমা চাওয়ার জবাবে ওই জাতির কাফিররা কানে আঙ্গুল দিয়েছে ও কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকেছে যাতে সত্যের আয়ওয়াজ শোনা না যায়! এমনকি তারা নুহ নবীর দিকে তাকাতেও চাইত না! সত্যের বিরোধিতা মানুষকে এভাবেই গোড়া বা একগুয়ে ও অন্ধ করে দেয়!
Zdravo, htio sam znati vašu cijenu.