HISTORY

কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন ওমর রাঃ

কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন ওমর রাঃ

কঠিন মহামারী থেকে বাঁচতে হযরত ওমর (রাঃ) এর সিদ্ধান্ত

হযরত ওমর (রাঃ) দ্বিতীয়বারের মতো সাম পরিদর্শনের জন্য বের হন আর সেখানে পৌঁছে শুনতে পান  প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।  এটা প্রথমে ছড়ায় ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী অবস্থিত একটি অঞ্চল হল আমওয়াস  বা  ইমওআস সেখান থেকে সামে ছড়িয়ে পড়ে। আর তা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।

১৯৬৭ সালের ইজরায়েল  ইমওআস অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস করে  সেখানে কানাডা পার্ক নামে একটি পার্ক তৈরি করে। আর কানাডা ভিত্তিক ইহুদি তহবিলের অর্থায়নে এই পার্কটি তৈরি।

যখন প্লেগ রোগ ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে  আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত,  এমন সময় ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)  সাম এর উদ্দেশ্যে বের হন আর সেখানে সারগ নামক এলাকায় এলে আবু উবাইদা ও অন্যান্য নেতাদের সাথে দেখা হয়। ওমর (রাঃ) কে তারা অবহিত করল যে, এই এলাকায় প্লেগ রোগছড়িয়ে পড়েছে।

তাদের কথা শুনে ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন ইসলামের প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদেরকে ডাক দাও। ওমর (রা) এক এক করে ডাকলেন আনসার  মুহাজির এবং কুরাইশ বংশের  প্রবীণ সাহাবীদেরকে। প্রথমে  মুহাজিরদেরকে ডাক দিলেন তাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন কিন্তু তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। তাদের মতামত জানতে চাইলেন অনেকেই বলতে থাকলো যে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি আর সেখান থেকে আমরা ফিরে যাব। তারা বলতে থাকলো এই অবস্থায় আপনি ফিরে যাবেন না ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সবার কথা শুনে ফিরে যাওয়ার ফিরে যেতে বললেন।

তারপর তিনি আনসারদেরকে ডাকলেন এবং তাদের পরামর্শ  করে জানতে চাইলেন তারাও মুহাজিরদের মতই মতবিরোধ করতে থাকলো এমন অবস্থা দেখে তিনি তাদেরকে চলে যেতে বললেন।

কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন ওমর রাঃ

তারপর ডাক দিলেন কুরাইশ বংশের প্রবীণ মুহাজির সাহাবীদেরকে কিন্তু তাদের  মধ্যে দেখতে পেলেন তারা দুজন ও মতবিরোধ করল না। তারা এভাবে বলল বলল যে, আপনি মানুষকে এই মহামারীর মধ্যে ফেলবেন না বরং তাদেরকে নিয়ে ফিরে যাবেন আমরা এটাই উপযুক্ত মনে করছি।

কিছুক্ষণ পর হযরত ওমর (রাঃ) ঘোষণা দিলেন যে আমি চলে যাবো, তোমরা চলে এসো এমন সংবাদ শুনে হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) বললেন যে, আপনি আল্লাহর তাকদীর থেকে সরে যাচ্ছেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তার এই কথাটা বলা কে একটুও পছন্দ করলেন কেন না। তিনি তার মত ভিন্ন তাকে অপছন্দ করেন তাই তিনি বললেন আবু উবাইদা তুমি ছাড়া যদি কেউ এমন কথা বলতো।

হযরত ওমর  আবু উবাইদার উত্তরে বললেন, হ্যাঁ আমি  আল্লাহর এক তাকদীর থেকে অন্য  তাকদীরে পালিয়ে যাচ্ছি যেমন মনে করো তোমার অনেক আছে  তুমি একটা  উপত্যকায় এসেছো একদিকে উর্বর প্রান্তর অন্যদিকে শুষ্ক প্রান্তর। তুমি যদি উর্বর প্রান্তে উট চরাও তাহলে কি আল্লাহর তাকদীরের উপর নির্ভর করবে না এবং যদি শুষ্ক প্রান্ত  প্রান্তে উট চরাও তাহলে কি আল্লাহর তাকদীরের উপর নির্ভর করবে না।

এরই মধ্যে আরেকজন সাহাবী হযরত  আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) তা’আলা আনহু তিনি কিছুক্ষনের জন্য বাইরে ছিল।  তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য অতঃপর যখন তিনি এলেন তখন তিনি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে বললেন, এই বিষয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে। আমি  আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব এর কথা শুনতে পেলে তাতে প্রবেশ করবে না আর যদি এমন হয় তোমরা সে অঞ্চলে প্রবেশ করেছ তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু একথা শুনে বললেন আলহামদুলিল্লাহ সবাই ফিরে গেলেন। (বুখারি হাদিস 5729)

কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন ওমর রাঃ

 হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আবার জানতে পারলেন  যে, মহামারি চরম আকার ধারণ করেছে তখন তিনি সেনাপতি আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন। তারপর তার উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখেন তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক তোমার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এ সম্পর্কে আমি সরাসরি তোমাকে বলতে চাই তাই তোমাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলছি। আমার পত্র পড়ে আমার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে পত্রটি তোমার হাতছাড়া করবে না রাতে পত্র পৌঁছালে সকাল হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে আর দিনের বেলায় পৌঁছালে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু কর।

আর যখন হযরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পত্রটি পেলেন। তখন তিনি সেই পত্রটি পড়ে উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেন তখন তিনি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কাছে ক্ষমা চাইলেন। আর বললেন হে আমীরুল মুমিনীন আমি আপনার প্রয়োজনের বিষয় বুঝেছি সুতরাং আমাকে ক্ষমা করবেন আমি এখন মুসলিম সেনাবাহিনীতে অবস্থান করছি আর তাদেরকে ছেড়ে আমি যেতে চাই না।

আল্লাহ আমি সহ সবার ব্যাপারে ফয়সালা করবেন তারপর তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে মুক্তি চাইলেন আর বললেন সৈন্যবাহিনীর সাথে আমাকে ছেড়ে দেন হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর পর তিনি কাঁদতে থাকলেন পাশে থাকা সাবিনা একটু ভয় পেয়ে গেল তারা জিজ্ঞেস করলেন হে আমীরুল মুমিনীন কি হয়েছে আপনি এমন করে খাচ্ছেন কাঁদছেন হযরত আবু  উবাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কি শহীদ হয়েছে তারপর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদের জবাবে বললেন তিনি এখনো শহীদ হন নি কিন্তু খুব দ্রুতই শহীদ হবেন। এরপরই হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর কাছে সংবাদ আসে যে হযরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া সংগৃহীত)

আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং এই করোনাভাইরাস থেকে আমরাও যেন এমন না করি বরং নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করি এবং সকলকে নিরাপদ  রাখি। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইহয়তো এভাবেই আমরা বাঁচতে পারি এই মহামারী থেকে আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন।

আমীন।

কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন  ওমর রাঃ
কঠিন মহামারী থেকে যেভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন ওমর রাঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button