সকালে ফজরের নামাযের গুরুত্ব
শোকাবহ মহররম
সকালে ফজরের নামাযের গুরুত্ব
সকালে ফজরের নামাযের গুরুত্ব
হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব (আঃ)’কে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, ‘শেষ যুগের লোকদের জীবিকা কেন সীমাবদ্ধ থাকবে?
তিনি বলেন: কারণ তাদের নামায কাযা হবে।
একদা এক ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিক্ব (আঃ)’র খেদমতে এসে বলেন যে, ‘আমি একটি পাপ করেছি।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করবেন।
লোকটি বলল, ‘আমি যে পাপ করেছি সেটা মহৎ!’
ইমাম (আঃ) বলেন, ‘এটি যদি কোনো পর্বতের সমান হয় তাও আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।’
লোকটি পুনরায় বলে, ‘আমার পাপ খুবই বড়!’
তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘তবে তুমি কোন পাপে লিপ্ত হয়েছো?’
এরপরে লোকটি ইমামের কাছে নিজের গুনাহের বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন।
~ লোকটির বক্তব্য যখন শেষ হয়ে গেল তখন তিনি লোকটিকে সম্বোধন করে বললেন,
‘আল্লাহ তাআলা তবুও ক্ষমা করবেন,
আমি ভয় করছিলাম যে তুমি সকালের নামায তো কাযা করনি।’
~ একইভাবে, আয়াতুল্লাহ হাজী শেখ হাসান আলী ইসফাহানী (যিনি নাখোদকি নামে পরিচিত)
ওসিয়াত করে নিজের পুত্রকে বলেন,
‘যদি কোনও ব্যক্তি চল্লিশ দিন পর্যন্ত আধ্যাত্মিক সাধনা ও ইবাদত করেন এবং
একবার তার সকালের নামায কাযা হয়ে যায় তবে চল্লিশ দিনের ইবাদত ও
আধ্যাত্মিক সাধনার ফলাফল গুরুত্বহীন হয়ে যাবে!’
জেহাদ বিন নাফস্ খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ৬৬…
ওসায়েলুশ শিয়া খণ্ড ৩ পৃষ্ঠা ১৫৬…
বিহারুল আনওয়ার খণ্ড ৮ পৃষ্ঠা ৭৩…
সকালে ফজরের নামাযের গুরুত্ব?
আশুরার ঘটনা নিয়ে কল্পকাহিনি ও বাস্তবতা :
মহররম মাস এলে আহলেবাইত প্রেমীরা যেমন শোকাহত হন তেমনি আহলেবাইতের দুশমনরা বিচলিত হয়ে পড়েন।
তারা আশুরার দিনে কার বালার ময়দানে সংঘটিত মর্মা ন্তিক ঘটনাকে গুরু ত্বহীন করে তুলে ধরার
জন্য নানা কল্পকা হি নী সামনে নিয়ে আসে।
যেমন- মহররমের ১০ তারিখে আল্লা হ তায়ালা এই পৃথিবী বানিয়ে ছেন, হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন
এবং হযরত হাওয়া (আ.)-এর সঙ্গে মিলিত করেছেন! এদিন নুহ (আ.)–এর প্লাবন সমাপ্ত হয়
এবং নুহ (আ.)–এর জাহাজ তুর স্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে।
এদিন হজরত ইব্রা হিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নি কু ণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন।
এদিন হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
এদিনে হজরত আইয়ুব (আ.) রোগমুক্তি লাভ করেন। এদিনেই হজরত সুলাইমান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব ফিরে পান।
এদিনে হজরত ইয়াকুব (আ.) হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)–কে ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন।
হজরত মুসা (আ.) কে ধাওয়া করতে আসা ফেরাউন বাহিনী এই দিনেই সাগরে ডুবে মারা যায়।
এদিনে হজরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এদিনেই তাঁকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
এ দিনে আড়াই হাজার নবী জন্মগ্রহণ করেন ইত্যাদি।
এসব খুশির খবর বলার পর বলা হয়- ৬১ হিজরীর এই দিনে কারবালার ঘটনাও ঘটেছিল।
তাদের দৃষ্টিতে আশুরা খুশির দিন তাই এদিন শোক প্রকাশ করা যাবে না।
আশুরার দিনে কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনাটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু অন্য ঘটনাগুলো কি প্রমাণিত?
পৃথিবী সৃষ্টি, আদম (আ.)-এর জন্ম- এসব ঘটনার দিন-তারিখ কি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন?
না, করেননি।
হযরত মুহম্মদ (সা.)-এর হিজরতের আগে তো হিজরী সনের প্রচলনই হয়নি তাহলে
এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যে আশুরার দিনে সংঘটিত হয়েছে- এ তথ্য কে দিল?
এগুলো হচ্ছে উমাইয়াদের কারসাজি।
সকালে ফজরের নামাযের গুরুত্ব
প্রশ্ন হচ্ছে- যারা এত নিখুঁতভাবে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে বড় বড় সব ঘটনার তারিখ হিজরী
সনের হিসাব অনুযায়ী বের করতে পারলেন তারা কেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম-মৃত্যুর
সঠিক তারিখ বলতে পারছেন না? বিশ্বনবীর জন্মদিন সম্পর্কে বহু মত আছে।
কেউ কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের ২ তিনি পৃথিবীতে আসেন।
অনেকেই বলছেন ৮, ১২ অথবা ১৭ রবিউল আউয়াল নবীজি জন্মগ্রহণ করেছেন।
৯, ১০ রবিউল আউয়ালের পক্ষেও জোরালো মত রয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর তারিখ নিয়েও মতভেদ আছে। কেউ বলেন ২৮ সফর,
কেউ বলেন ১ রবিউল আউয়াল, কারো মতে ২ রবিউল আউয়াল এবং বেশিরভাগের মতে ১২ রবিউল আউয়াল।
এখন বলুন- যারা বিশ্বনবীর জন্ম-মৃত্যু তারিখের ব্যাপারে একমত হতে পারলেন না তারা কেন বিনা দলিলে
আশুরার দিনের পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো মেনে নিলেন? এর কারণ একটাই আর তা হচ্ছে-
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া এবং পাপিষ্ট ইয়াজিদের অপকর্ম সম্পর্কে মানুষকে জানতে না দেওয়া।
তবে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন, কিয়ামত পর্যন্ত ইয়াজিদসহ উমাইয়াদের অপকর্মের বিরুদ্ধে
মানুষ কথা বলবেই। ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের আত্মত্যাগ এবং কারবালার
ঘটনা কখনো চেপে রাখা যাবে না।
◾ ইমাম হোসাইন (আঃ) এর জন্য ক্রন্দনের ফজিলত!
১. ইমাম রেজা (আঃ) বলেন, “হে ইবনে শাবীর, যদি তুমি ইমাম হোসাইন (আঃ)’র জন্য ক্রন্দন করো
আর তোমার মুখমণ্ডলে অশ্রু প্রবাহিত হয়, তাহলে আল্লাহ তোমার ছোট-বড়, কম-বেশি সব গুনাহ মাফ করে দিবেন।”
২. ইমাম বাকের (আঃ) বলেন, “যে ঈমানদার ব্যক্তি ইমাম হোসাইন (আঃ)’র জন্য অশ্রু ঝরাবে এবং
তার মুখমন্ডলকে অশ্রুসিক্ত করবে, আল্লাহ তাকে বেহেস্তে জায়গা দান করবেন।”
৩. ইমাম সাদিক (আ.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের জন্য কাঁদবে অথবা
অন্যকে কাদাবে অথবা কান্নাকাটি করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তার জন্য বেহেস্ত ওয়াজিব করে দিবেন।
৪. মহানবী (সা.) বলেন, “কিয়ামতের দিন সবাই ক্রন্দন করবে, কিন্তু যারা ইমাম হোসাইনের জন্য
দুনিয়ায় ক্রন্দন করবে তারা সেইদিন আনন্দে উৎফুল্ল থাকবে।” সুবহানআল্লাহ্!