ইরানের ইসলামী বিপ্লব ৩য় পর্ব.
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের দিনগুলি .
(তৃতীয় পর্ব)
১৯৬৪ সালের চৌঠা নভেম্বর ইমামের নির্বাসিত জীবনের সূচনা হবার পর ইরানে স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়ে এলেও বিপ্লবের প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়নি।
ইমাম খোমেনী (রহ.) নির্বা সনে থেকেই ইরা নিদেরকে
বিভিন্ন দিক- নির্দে শনা দিয়ে ছেন।
এ সময় তিনি তার প্রিয় সন্তা নকে হারান।
এ পর্বে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করা হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.) বিদেশে অবস্থান করলেও তিনি সব সময় ইরানি জনগণকে
স্বৈরশা সন থেকে মুক্ত করার চি ন্তায় মগ্ন থাকতেন।
নির্বা সনে থেকেও তিনি শাহের অন্যায়-
অপ কর্মের বিরু দ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন।
ইমাম খোমেনীর পাশা পাশি ইরানে অবস্থা নকারী তার সহযো গীরাও
জনগণকে সজাগ ও সচেতন করে তোলার ব্যা পারে সোচ্চার ছিলেন।
এর মধ্য দিয়েই ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের উপযুক্ত ক্ষেত্র প্র স্তুত হতে থাকে।
এমনি এক পরিস্থি তিতে ১৯৭৭ সালের ২৩ শে অক্টোবর ইমাম খোমেনী (রহ.)-র জেষ্ঠ পুত্র আয়া তুল্লাহ সাই য়্যেদ মোস্তফা খোমেনী ৪৭ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।
ইমামের এই সন্তা নের মৃত্যুর পেছনে ইরানের শাহ সরকারের
নিরা পত্তা বাহিনী এবং ইরাকের বাথ সরকারের হাত ছিল বলে সবাই বিশ্বাস করেন।
তাদের সম্পৃ ক্ততার ব্যা পারে কিছু তথ্য- প্রমা ণও রয়েছে।
ইমাম খোমেনী (রহ.)-র জেষ্ঠ পুত্র আয়া তুল্লাহ মোস্তফা খোমেনী একজন আদর্শ মানুষ ছিলেন।
তিনিও তার পিতার মতোই স্বৈরা চারের বিরু দ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
ইরানের স্বৈরা চারী শাহ সরকারের বিরো ধিতা করার কারণেই আয়া তুল্লাহ মোস্তফা খোমেনী কেও গ্রেফ তার করে তুরস্কে নির্বা সনে পাঠানো হয়ে ছিল।
ইমাম খোমেনী (রহ.)-কে নির্বা সনে পাঠানোর কিছু দিন পরই এই ঘটনা ঘটে।
এরপর মোস্তফা খোমে নীকেও তার পিতার সাথে ইরাকে পাঠানো হয়।
ইরাকে পৌছে তিনি তার পিতা ইমাম খোমেনী (রহ.) এবং সেখা নকার বিখ্যাত আলেমদের কাছ থেকে আরও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে মনো নিবেশ করেন।
সাই য়্যেদ মোস্তফা খোমেনী সব সময় তার পিতার সহযোগী ও উপদে ষ্টা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব ৩য় পর্ব.
ইরানের শাহ সরকার ভেবেছিল পুত্রের মৃত্যুর ফলে ইমাম খোমেনী (রহ.) অত্যন্ত ভেঙ্গে পড়বেন এবং সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে সরে যাবেন।
কিন্তু শাহ সরকারের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। ইমাম খোমেনী তার সন্তা নের মৃত্যু তে অত্যন্ত কষ্ট পেলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখার ব্যাপা রে তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্প।
এ ব্যাপা রে তার অব স্থানে বিন্দু পরিমাণ ছেদ পড়েনি।
সন্তানে র শাহাদাতের পর তিনি এক ভাষণে স্বৈরা চারী শাহের বিরু দ্ধে জ্বা লাময়ী ভাষণ দেন এবং ইরানি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
ইমাম খোমেনী (রহ.)-র জেষ্ঠ পুত্রের সন্দেহ জনক মৃত্যুর খবরকে শাহ সরকার সেন্সর করলেও বিভিন্ন মাধ্যমে তা জনগণের কাছে পৌছে যায় এবং জনমনে ব্যাপক প্রতি ক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
আয়া তুল্লাহ মোস্তফা খোমেনীর স্মরণে ইরানে বিশেষ অ নুষ্ঠান উদযাপন করা হয় এবং প্রায় তের বছর পর এই প্রথম প্রকা শ্যে জন সমাবেশে ইমাম খোমেনীর নাম উচ্চা রিত হয়।
এর প্রায় তিন মাস পর ইরানে শাহের অনুগত একটি পত্রি কায় ইমাম খোমেনী (রহ.)-র প্রতি কটূক্তি করে একটি প্রবন্ধ প্রকা শিত হয়।
১৯৭৮ সালের ৯ই জানু য়ারি শাহের সরাসরি নি র্দেশে
এত্তেলাত পত্রি কায় প্রব ন্ধটি প্রকাশিত হয়।
প্রবন্ধটি প্রকাশিত হবার পরপরই জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমে এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবন্ধটি প্রকাশিত হবার পরের দিন অর্থাৎ ১০ই জানুয়ারি এর প্রতিবাদে কোমের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মঘট পালিত হয় এবং ছাত্ররা বিক্ষোভে অংশ নেয়।
১১ ই জানুয়ারি ছাত্রদের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে কোমের সাধারণ মানুষও বিক্ষোভে ব্যাপক ভাবে অংশ নেয়।
ফলে কোম শহর বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয়।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব ৩য় পর্ব.
অতীতের মতোই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। হতাহত হয় বহু মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের উপর ভয়াবহ এই হামলার পর বাহ্যত ঐ আন্দোলনটি স্তিমিত হলেও সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয় যে, সচেতন ইরানিরা শাহের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।
কোমে অনুষ্ঠিত ঐ বিক্ষোভের পর এ বিষয়টিও স্পষ্ট হয় যে,
ইরানিরা ১৩ বছর ধরে ইমাম খোমেনীর অনু পস্থিতির পরও তাকেই নিজেদের নেতা বলে মনে করে এবং ইমামের অবমাননাকে তারা কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
ইরানের শাহ সরকার ও সহযোগী মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র ভাবতেও পারেনি যে,
রাষ্ট্রীয় ভাবে ব্যাপক অপপ্রচারণার পরও ইরানি জনগণ তাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় নেতাকে এত বেশী ভালো বাসেন।
এরপরও স্বৈরাচারী শাহ সরকার এই ভেবে স্বস্তি অনুভব করছিল যে, কোমের আন্দোলন থেমে গেছে এবং নতুন করে এ ধরনের ঘটনার পুণরাবৃত্তি আর সম্ভব নয়।
কিন্তু ওই ঘটনার ৪০তম দিবসে শহীদদের স্মরণে ইরানের বিভিন্ন স্থানে অনু ষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তাব্রিজে বিপ্লবী আলেম আয়া তুল্লাহ কাজী তাবা তাবায়ির আহ্বানে চেহ লামের অনুষ্ঠানে শাহের নিরাপত্তা বাহিনী হামলা চালায়।
এতে বেশ কয়েক জন হতাহত হয়।
আর এই ঘটনার পর গোটা তাব্রিজের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং রাস্তায় নেমে শাহ বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।
এ অবস্থায় শাহের সেনাবাহিনী ট্যাংক ও সাজোয়া যান মোতায়েন করে এবং বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক হামলা চালায়।
সেনাবাহিনীর হামলায় বহু লোক শাহাদাৎবরণ করেন এবং শত শত মানুষ মারাত্বক আহত হয়।
তাব্রিজের ঐ গণজাগরণের পর তখনি সবাই এটা উপলব্ধি করতে থাকে যে,
ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের সময় ঘনিয়ে এসেছে এবং শাহের বিরুদ্ধে বিপ্লব সফল হবে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লব ৩য় পর্ব.
ইমাম খোমেনী (রহ.) সে সময় ইরাকে নির্বাসনে ছিলেন এবং তিনি সেখান থেকেই গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
তিনি তাব্রিজের রক্তক্ষয়ী ঘটনা পর্যবেক্ষণের পর ইরানি জনগণের প্রতি এক শোক বার্তায় বলেন,
শাহের এটা জানা উচিত যে, ইরানিরা তাদের পথ খোজেঁ পেয়েছে এবং অপরাধীদেরকে পর্যবসিত করে প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত তারা থামবেনা।
আল্লাহর ইচ্ছায় গোটা ইরানের মানুষ শাহ সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠেছে ও এই প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে
এবং স্বৈরাচারী শাহের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সম্মানিত
আলেমদের মাধ্যমে ইসলামের পতাকা উত্তোলিত হবে।
ইমাম খোমেনী (রহ.) এরপর ঐ বছর ফার্সি নববর্ষ উপলক্ষ্যে আবারও কোম ও তাব্রিজের
শহীদদের আত্মদানের কথা ইরানীদের স্মরণ করিয়ে দেন।
সে বছর ইরানিরা নববর্ষের আনন্দে ডুবে না গিয়ে বিপ্লব সফল করার উপায় নিয়ে ভাবতে থাকেন
এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য অটুট রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে থাকেন।
আর এভাবেই বিপ্লবের পথে অগ্র যাত্রা ত্ব রান্নিত হয়।
(সংগৃহীত)
প্লব,
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ – পর্ব ১ম,ইরান বিপ্লব,
যত বিপ্লব,
রুশ বিপ্লব,
ইরানের ঘটনা, শিল্প বিপ্লব,