আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের দর্শন
আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের দর্শন
আল্লাহর ওলীদের বিশেষত মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ইমামদের কবর জিয়ারতের বিশেষ আধ্যাত্মিক প্রভাব ও বরকত রয়েছে। এখানে আমরা আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের কিছু আত্মিক প্রভাবের উল্লেখ করছি:
১। আল্লাহর ওলী ও ধর্মীয় ব্যক্তিগণ প্রকৃতপক্ষে সকলের আদর্শ যাদের অনুসরণের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য লাভ ও পূর্ণতায় পৌঁছা যায়। শুধু মুসলিম সমাজেই নয়,বরং যে কোন সমাজেই তাঁদের অনুসরণীয় ব্যক্তিদের মহৎ হিসেবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালায় যাতে করে অন্যরাও তাঁদের অনুসরণের মাধ্যমে পূর্ণতা ও সাফল্যের পথে পা রাখতে পারে। যদিও এই অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গ জীবিত নেই কিন্তু তাঁদের কবর ও স্মৃতি সৌধে গমনের আহ্বান তাঁদের পথে চলতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করে।
অনেক দেশেই কোন বিশেষ চত্বর বা ভাস্কর্যকে নাম না জানা আত্মত্যাগী সৈনিকদের নামে নামকরণ করা হয়। কারণ তারা দেশ প্রেমের প্রতীক এবং এ পথে নিজ জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছে। এ কর্মের মাধ্যমে ঐ জাতি চায় নতুন প্রজন্মকে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বহিঃশত্রুর হাত হতে দেশ রক্ষার মহান ব্রত নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
জাতির মহান ব্যক্তিবর্গ ও আদর্শ নেতাদের কবরের নিকট যাওয়ার বিশেষ আত্মিক প্রভাব রয়েছে মনস্তত্ত্ববিদগণ এ বিষয়ের উপর বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন।
আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ বলেছেন : সময়ের পরিক্রমায় এমন দিন আসল যখন হুসাইন (আ.)-এর জন্য সকল পথ রুদ্ধ করে কারবালার দিকে যেতে তাঁকে বাধ্য করা হল। আজ পর্যন্ত কারবালার ইতিহাস ইসলামের ইতিহাসের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে যে,প্রকৃত প্রস্তাবে তা মানবজাতির ইতিহাসের অংশে পরিণত হয়েছে।
আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের দর্শন
কারবালা বর্তমানে এমন এক স্থানে পরিণত হয়েছে,যেখানে মুসলমানগণ শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে জিয়ারতে যায়। এমনকি অমুসলমানরাও সেখানে ভ্রমণ ও দর্শনের উদ্দেশ্যে যায়। কিন্তু কারবালার অধিকার তখনই আদায় হবে যখন তা মানুষের জন্য পবিত্রতা ও মর্যাদায় বিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তির জিয়ারতের স্থানে পরিণত হবে। কারণ আমার এমন কোন স্থানের কথা জানা নেই যা কারবালার ন্যায় মানবতার সকল মর্যাদাপূর্ণ ও ইতিবাচক সুন্দর দিকের স্মৃতি বহন করছে এবং এ বৈশিষ্ট্য সেটি ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের মাধ্যমে অর্জন করেছে।১৬৬
২। জিয়ারত ভালবাসার প্রকাশ ও প্রতিচ্ছবি সন্দেহ নেই। আহলে বাইতের ভালবাসা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের উপর ওয়াজিব। মহানবী (সা.) বলেছেন :أحبُّوا اهل بیتی لِحُبّی ‘ আমার আহলে বাইতকে আমার ভালবাসার কারণে ভালবাস।’ ১৬৭
এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর ভালবাসা যেমনি ওয়াজিব তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ভালবাসাও তদ্রুপ ওয়াজিব। আমরা জানি ভালবাসার অবশ্যই প্রকাশ আছে যা শুধু তাঁদের আনুগত্য ও আন্তরিক ভালোবাসা পোষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাঁদের কবর জিয়ারতও ঐ আন্তরিক ভালোবাসার প্রকাশ।
৩। মহানবী (সা.) আহলে বাইতের পবিত্র ব্যক্তিদের কবর জিয়ারত তাঁর রেসালতের দায়িত্বে একরূপ বিনিময় স্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
( قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى)
“ ( হে নবী!) বলুন, আমি আমার রেসালতের দায়িত্বের বিনিময় স্বরূপ আমার নিকটাত্মীয়ের ভালবাসা ব্যতীত কিছুই চাই না। ” ১৬৮
রাসূলের নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা পোষণের অন্যতম প্রকাশ হলো তাঁদের কবর জিয়ারত।
আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারতের দর্শন
৪। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত তাঁদের অনুসৃত পথের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতার নিদর্শন।
৫। আল্লাহর ওলিগণের কবর জিয়ারত বাস্তবিক ভাবে তাঁদের সঙ্গে নতুন করে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হওয়া যে,তাঁদের আদর্শ ও পথকে আমরা চিরজাগরুক রাখব। আমরা জানি আহলে বাইতের ইমামগণ আমাদের উপর অধিকার ও অভিভাবকত্ব রাখেন। তাই আমাদেরও উচিত তাঁদের অভিভাবকত্ব ও আমাদের উপর অধিকারকে মেনে নিয়ে তাদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। এই প্রতিশ্রুতি শুধু মুখে ঘোষণার মাধ্যমে নয়,বরং নিজেদের কর্মের মাধ্যমে এই আন্তরিক প্রতিশ্রুতির প্রকাশ ঘটাব। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁদের কবর জিয়ারত ও তাঁদের রওজায় উপস্থিতির মাধ্যমে এই প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি ঘটাব। এ কারণেই ইমাম রেজা (আ.)-এর হাদীসে এসেছে- নিশ্চয়ই প্রতি ইমামের তাঁদের অনুসারীদের উপর অধিকার ও প্রতিশ্রুতি রয়েছে যা রক্ষা ও পালনের সর্বোত্তম পন্থা হলো তাঁদের কবর জিয়ারত করা।’ ১৬৯
৬। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত মানুষের আধ্যাত্মিকতাকে বৃদ্ধি করে ও হৃদয়ে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।
৭। আল্লাহর ওলীদের কবর জিয়ারত তাঁদের সন্তুষ্টির কারণ হয় এবং তাঁদের দোয়ার ফলে ঐশী বরকত জিয়ারতকারীর উপর অবতীর্ণ হয়।
৮। ওলিগণের কবরের নিকটে গেলে তাঁদের ঐতিহাসিক অবদান ও আত্মত্যাগের কথা সকলের স্মরণ হয় যা তাঁদের অনুসৃত পথে চলার দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করে।
৯। সর্বোপরি তাঁদের কবর জিয়ারত তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সন্ধির এবং তাঁদের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা স্বরূপ ।
টিকাঃ
১৬৫। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯,হাদীস নং ৩।
১৬৬। আবুশ শুহাদা,আব্বাস মাহমুদ আক্কাদ,পৃ. ১২৯।
১৬৭। মুসতাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৪৯।
১৬৮। সূরা শুরা : ২৩।
১৬৯। তাহজীবুল আহকাম,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৭৮-৭৯।
লেখকঃআলী আসগর রেজওয়ানী
অনুবাদঃ আবুল কাসেম
Ola, quería saber o seu prezo.